– মন খারাপ ?
– না,খুব জটিল একটা সমস্যা নিয়ে ভাবছি। আচ্ছা বলতো পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কণার নাম কি ?
– সাইন্স সম্পর্কে আমার ধারণা খুব কম । ছোটবেলায় পড়েছি পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম অংশ অ্যাটম। এটাকে আবার ভাঙ্গলে নিউটন আরও হাবিজাবি কি কি পাওয়া যায় । সবই মুখস্ত বিদ্যা।এইগুলা কিছুই বুঝতাম না। মনে হতো কেউ একজন ইচ্ছামত যা মন চায় লিখছে আর আমরা পাশ করার জন্য মুখস্ত করতাম ।
– তোমার সেই ছোটবেলাতো এখন আর নেই। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে, সবচেয়ে ছোট কণার নাম কোয়ার্ক। অনুমান করতো কোয়ার্কের সাইজ কেমন হতে পারে?
-অ্যাটম থেকে ছোট ? নাকি আরও ছোট ?
– হা হা , এক সেন্টিমিটারের মিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন ভাগ
– আমার কেন জানি এইগুলা বিশ্বাস হয়না , এত ছোট জিনিস পরিমাপ করবে কি করে ? আচ্ছা বাদ দাও । এইগুলা উদ্ভট বিজ্ঞানের কথা রাখো এখন । একটা কাজ করে দাও। আমার খুব কাছের এক বান্ধবীর মেয়ে হয়েছে। এখন সে আমাকে খুব করে বলছে একটা সুন্দর নাম রেখে দিতে । আমার মাথায় কিছু আসছে না। প্লিজ তুমি একটা বলে দাও ।
– কোয়ার্ক রেখে দাও ।
– আমি ফোন রাখলাম।
– আরে মজা করলাম। আচ্ছা দাড়াও একটু চিন্তা করি।
– “লীলাবতী” রাখতে বলতে পারো।লীলাবতী ছিল ভারতের বিখ্যাত গণিতবিদ ভাষ্করাচর্যের কন্যা ।যদিও লীলাবতীর জীবনে অনেক দুঃখ ছিল । ভাষ্করাচর্য তার কন্যাকে ধীরে ধীরে পাটিগণিত শেখান।আর তিনি চেয়েছিলেন তার কন্যাকে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ মনে রাখুক তাই তিনি পাটিগণিতের একটি বইটি লিখেন এবং মেয়ের নামে নাম দেন, “লীলাবতী” ।
“Whilst making love a necklace broke.
A row of pearls mislaid.
One sixth fell to the floor.
One fifth upon the bed.
The young woman saved one third of them.
One tenth were caught by her lover.
If six pearls remained upon the string
How many pearls were there altogether?”
লীলাবতী বইটির শেষ দিকে ভাষ্করাচর্যের একটা কথা ছিল
“ এই পৃথিবীতে সুখ আর সমৃদ্ধি গুণিতক হারে বৃদ্ধি পাবে যদি লীলাবতীকে তার উপযুক্ত মর্যাদা দিতে পারে ”
– আচ্ছা এখন রাখি , বান্ধবীকে ফোন করে নামটা বলি ।
তন্দ্রা ফোন রেখে দিয়েছে । আমি জানি একটু পরেই সে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করবে লীলাবতী নামের অর্থ কি। আমি যখন বলবো, যে লীলা করে বেড়ায় সেই লীলাবতী তখন তন্দ্রা খুব রাগ করে ফোন রেখে দিবে । আমি অনেকক্ষণ ফোন না দিলে সে নিজেই মোবাইলে মেসেজ দিবে কিন্তু সেই মেসেজে কোন শব্দ থাকবেনা , থাকবে কিছু অদ্ভুত সিম্বল ।কিছু শব্দহীন অভিমান। সে বার বার তার রাগ কেন ভাঙ্গাচ্ছিনা সেটার নিঃশব্দ সিগন্যাল দিতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি ফোন দিয়েছি ।
—————————————————————————-
১১.১১.২০১৮
মেলাটেনার স্ট্রীট
আখেন , জার্মানি
পুনশ্চঃ এই লেখাটার স্থান অনেক প্রশস্ত, বাংলাদেশ থেকে জার্মানি পর্যন্ত ।
আবারও পুনশ্চঃ আমি কোন লেখক নই । কিন্তু মাঝে মাঝে কেন জানি লিখতে ইচ্ছা করে,বিশেষ করে রাতে । রাত যত গভীর হয় আবেগ তত তীব্র হয়। মনের মধ্যে এত সুন্দর সুন্দর কথা ঘুরপাক খায়, আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই । কিন্তু পরে যখন লিখতে বসি সেই মুহূর্তের আবেগটুকু আর থাকেনা। যা লিখি সেটা নিজেই ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা করে। তাই নিজের এই লেখাগুলা “আমার ছেড়া খাতা” ব্লগে লিখে রাখি মাঝে মাঝে। আমার লেখার কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকে তন্দ্রা নামে একটি মেয়ে আর অমিত নামের একটি ছেলে । তন্দ্রা সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি চরিত্র , এখন পর্যন্ত এই চরিত্রটি লেখার সময় বাস্তবের কাউকে কল্পনা করিনি । কিন্তু অমিত চরিত্রটি লেখার সময় মাঝে মাঝে নিজেকে এই চরিত্রের মধ্যে ভাবতে শুরু করি । পরক্ষণেই বুঝতে পারি আমি কোন গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নয়, আমি অতীব সাধারণ শ্রেণীর একজন। তখনই আমি অমিত চরিত্রের ছায়া থেকে সরে বাস্তবতায় ফিরে আসি। আমাকে ক্লাস করে এসে কি খাবো সেটা চিন্তা করতে হয় , রান্না করতে হয় কিন্তু গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রদের তা করতে হয়না ।