Author: amarcherakhata

লীলাবতী
– মন খারাপ ?
– না,খুব জটিল একটা সমস্যা নিয়ে ভাবছি। আচ্ছা বলতো পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট কণার নাম কি ?
– সাইন্স সম্পর্কে আমার ধারণা খুব কম । ছোটবেলায় পড়েছি পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম অংশ অ্যাটম। এটাকে আবার ভাঙ্গলে নিউটন আরও হাবিজাবি কি কি পাওয়া যায় । সবই মুখস্ত বিদ্যা।এইগুলা কিছুই বুঝতাম না। মনে হতো কেউ একজন ইচ্ছামত যা মন চায় লিখছে আর আমরা পাশ করার জন্য মুখস্ত করতাম ।
– তোমার সেই ছোটবেলাতো এখন আর নেই। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে, সবচেয়ে ছোট কণার নাম কোয়ার্ক। অনুমান করতো কোয়ার্কের সাইজ কেমন হতে পারে?
-অ্যাটম থেকে ছোট ? নাকি আরও ছোট ?
– হা হা , এক সেন্টিমিটারের মিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন ভাগ
– আমার কেন জানি এইগুলা বিশ্বাস হয়না , এত ছোট জিনিস পরিমাপ করবে কি করে ? আচ্ছা বাদ দাও । এইগুলা উদ্ভট বিজ্ঞানের কথা রাখো এখন । একটা কাজ করে দাও। আমার খুব কাছের এক বান্ধবীর মেয়ে হয়েছে। এখন সে আমাকে খুব করে বলছে একটা সুন্দর নাম রেখে দিতে । আমার মাথায় কিছু আসছে না। প্লিজ তুমি একটা বলে দাও ।
– কোয়ার্ক রেখে দাও ।
– আমি ফোন রাখলাম।
– আরে মজা করলাম। আচ্ছা দাড়াও একটু চিন্তা করি।
– “লীলাবতী” রাখতে বলতে পারো।লীলাবতী ছিল ভারতের বিখ্যাত গণিতবিদ ভাষ্করাচর্যের কন্যা ।যদিও লীলাবতীর জীবনে অনেক দুঃখ ছিল । ভাষ্করাচর্য তার কন্যাকে ধীরে ধীরে পাটিগণিত শেখান।আর তিনি চেয়েছিলেন তার কন্যাকে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ মনে রাখুক তাই তিনি পাটিগণিতের একটি বইটি লিখেন এবং মেয়ের নামে নাম দেন, “লীলাবতী” ।
“Whilst making love a necklace broke.
A row of pearls mislaid.
One sixth fell to the floor.
One fifth upon the bed.
The young woman saved one third of them.
One tenth were caught by her lover.
If six pearls remained upon the string
How many pearls were there altogether?”
লীলাবতী বইটির শেষ দিকে ভাষ্করাচর্যের একটা কথা ছিল
“ এই পৃথিবীতে সুখ আর সমৃদ্ধি গুণিতক হারে বৃদ্ধি পাবে যদি লীলাবতীকে তার উপযুক্ত মর্যাদা দিতে পারে ”
– আচ্ছা এখন রাখি , বান্ধবীকে ফোন করে নামটা বলি ।
তন্দ্রা ফোন রেখে দিয়েছে । আমি জানি একটু পরেই সে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করবে লীলাবতী নামের অর্থ কি। আমি যখন বলবো, যে লীলা করে বেড়ায় সেই লীলাবতী তখন তন্দ্রা খুব রাগ করে ফোন রেখে দিবে । আমি অনেকক্ষণ ফোন না দিলে সে নিজেই মোবাইলে মেসেজ দিবে কিন্তু সেই মেসেজে কোন শব্দ থাকবেনা , থাকবে কিছু অদ্ভুত সিম্বল ।কিছু শব্দহীন অভিমান। সে বার বার তার রাগ কেন ভাঙ্গাচ্ছিনা সেটার নিঃশব্দ সিগন্যাল দিতে থাকবে যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি ফোন দিয়েছি ।
—————————————————————————-
১১.১১.২০১৮
মেলাটেনার স্ট্রীট
আখেন , জার্মানি
পুনশ্চঃ এই লেখাটার স্থান অনেক প্রশস্ত, বাংলাদেশ থেকে জার্মানি পর্যন্ত ।
আবারও পুনশ্চঃ আমি কোন লেখক নই । কিন্তু মাঝে মাঝে কেন জানি লিখতে ইচ্ছা করে,বিশেষ করে রাতে । রাত যত গভীর হয় আবেগ তত তীব্র হয়। মনের মধ্যে এত সুন্দর সুন্দর কথা ঘুরপাক খায়, আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই । কিন্তু পরে যখন লিখতে বসি সেই মুহূর্তের আবেগটুকু আর থাকেনা। যা লিখি সেটা নিজেই ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা করে। তাই নিজের এই লেখাগুলা “আমার ছেড়া খাতা” ব্লগে লিখে রাখি মাঝে মাঝে। আমার লেখার কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকে তন্দ্রা নামে একটি মেয়ে আর অমিত নামের একটি ছেলে । তন্দ্রা সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি চরিত্র , এখন পর্যন্ত এই চরিত্রটি লেখার সময় বাস্তবের কাউকে কল্পনা করিনি । কিন্তু অমিত চরিত্রটি লেখার সময় মাঝে মাঝে নিজেকে এই চরিত্রের মধ্যে ভাবতে শুরু করি । পরক্ষণেই বুঝতে পারি আমি কোন গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র নয়, আমি অতীব সাধারণ শ্রেণীর একজন। তখনই আমি অমিত চরিত্রের ছায়া থেকে সরে বাস্তবতায় ফিরে আসি। আমাকে ক্লাস করে এসে কি খাবো সেটা চিন্তা করতে হয় , রান্না করতে হয় কিন্তু গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রদের তা করতে হয়না ।
নিষিদ্ধ সময়ের গল্প
মঙ্গলবার ,২১শে অগাস্ট,২০০৭
দুপুর ১২টাঃ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কাল । পুলিশের সাথে ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টদের ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে । সাথে যোগ দিয়েছে বুয়েট,ঢাকা মেডিক্যাল সহ আর অনেক প্রতিষ্ঠানের ছাত্র । আমি তখন সবে মাত্র ঢাকা সিটি কলেজে ভর্তি হয়েছি । বড় ভাইয়ের সাথে বুয়েটের হলে থাকি। শেরে বাংলা হল, রুম নাম্বার ৪০১১। একটা সিটেই তখন ২জন কষ্ট করে থাকি। বড় ভাই তার থিসিসের কাজে সেদিন কিশোরগঞ্জ গেছে।হলের বারান্দা থেকে দেখলাম রাস্তায় অনেক মানুষ,সবাই খুব বেস্ত হয়ে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে । এইসব দেখে আমি পলাশীর মোড়ে আসলাম। এসে দেখি ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা টায়ারে আগুন ধরিয়ে রাস্তা ব্লক করে রেখেছে। আর সবাই একসাথে হয়ে শ্লোগান দিচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর। আমার মধ্যে একধরনের এক্সাইটমেন্ট কাজ করতে লাগল। আগে কখনও এইরকম সামনাসামনি মিটিং মিছিল আন্দোলন দেখিনি ,টিভি,খবরের কাগজে পরতাম শুধু। একজন ফোনে বলতেছে ঢাকা মেডিক্যালের রাস্তা ব্লক করে রাখ আমরা পলাশী ব্লক করে রাখছি। আমার মতো উৎসুক জনতারও অনেক ভিড় ছিল।
বিকাল ৪টাঃ
হলের সবাই ছুটাছুটি করা শুরু করলো।হলের নোটিশ বোর্ডের কাছে ভিড় জমাতে লাগল সবাই। শূনতে পেলাম সরকার মাত্র ঘোষণা দিয়েছে হল ভেকেন্ট করে দেওয়ার জন্য। আগামি ২ঘণ্টার মধ্যে হল ভেকেন্ট না হলে সেনাবাহিনী এসে সার্চ করবে, কাউকে পেলেই ধরে নিয়ে যাবে। আর সন্ধ্যা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাস্তায় ৩জনের বেশী দেখলেই ধরে নিয়ে যাবে। আমি বুঝতেছিলাম না কি করবো। সবাই যে যার মতো খুব দ্রুত ব্যাগ নিয়ে হল থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আমি রুমে চলে গেলাম।গিয়ে দেখি ভাইয়ের রুমমেটরা সবাই চলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে । সবাই আমাকে খুব আদর করত । নিজের ছোট ভাইয়ের মতো দেখত । পড়ালেখা থেকে শুরু করে যে কোন সমস্যা হলে কেউ না কেউ এগিয়ে আসত। আমাকে মেহরাব ভাই বলল তোর ভাইতো আজকে আসবেনা।আর তোর ভাইকে মোবাইলেও পাবিনা ,সব মোবাইলের নেটওয়ার্ক অফ করে দিছে সরকার। এক কাজ কর তুই কামালের বাসা চিনিস? কামাল আমার ভাইয়ের বন্ধু এবং আমাদের গ্রামের বড় ভাই, তারা আজিমপুরে থাকে। আমি বেশ কয়েকবার বড় ভাইয়ের সাথে তাদের বাসায় গিয়েছি । তাই মেহরাব ভাই আমাকে বলল তুই আজিমপুরে ওদের বাসায় চলে যা, যদি লাগে বল আমি তোকে দিয়ে আসি । আমি বললাম না আমি পারব। আমি দ্রুত একটা ব্যাগ গুছায়ে বের হয়ে পরি । রাস্তায় নেমে দেখি ভয়াবহ অবস্থা । কোন রিক্সা খালি নেই । এক ছেলে সাথে তার গার্ল ফ্রেন্ড খুব সম্ভবত ,রিক্সাওালাকে বলতেছে মামা আজিমপুর যাবেন । রিকশাওয়ালা সেই ভাব নিয়ে আছে । না মামা যাবনা । ঐ ছেলে রিকশাওয়ালাকে প্রথমে ধমক দিয়ে বলল যাবেন না কেন। পরে খুব নরম সূরে বলতেছে মামা প্লিজ চলেন । পারলে সে রিক্সাওয়ালার পায়ে ধরে বসে থাকে তাও রিকশাওয়ালা যাবেনা । আমি আর চেষ্টা না করেই হেটে রওয়ানা দিলাম। হাটতে হাটতে প্রায় ৩০ মিনিট পর কামাল ভাইয়ের বাসায় পৌঁছলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি তাদের রুমে তালা দেওয়া । সম্ভবত তারা গ্রামের বাড়িতে গেছে। মোবাইল বের করে ফোন দিব তাও পারছিনা, নেটওয়ার্ক নেই। খুব চিন্তিত মনে হলে আসলাম। ইতিমধ্যে ২/১ জন ছাড়া সবাই চলে গেছে। আমি রুমে চলে যাই। অল্প কিছুক্ষণ পরেই সন্ধ্যা নেমে আসে। রুমে বসে বসে গান শুনছিলাম। হটাত করেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। হলে ইলেক্ট্রিসিটি যায়না কোনসময় । পরে বুঝতে পারলাম হলের সব ইলেক্ট্রিসিটির লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রাত ৯টা :
আমি অন্ধকার রুমে বসে আছি । খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু নিচেও নামতে পারছিনা । হলের সব গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একটু পর পর সেনাবাহিনীর গাড়ি টহল দিচ্ছে সাইরেন বাজিয়ে। বারান্দায় বসে ছিলাম, ভয়ে রুমে চলে যাই।আমি ছোট বেলা থেকেই ভুত অনেক ভয় পেতাম , অন্ধকারে রাস্তায় বেরুতে ভয় লাগত। সেদিন আমি সম্পূর্ণ হলে একা , কোথাও কেউ নেই , নেই সামান্য আলো। সবগুলা রুম তালাবদ্ধ।মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই তাও অনেকবার ট্রাই করছিলাম যদি কারো মোবাইলে কল যায়। সেদিন আমার ভুতের ভয় পাওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে বেশী কিন্তু অবিশ্বাস্য কোন কারনে আমার ওইধরনের কোন ভয় কাজ করেনি। যদি সেনাবাহিনী এসে রুমে তালাস করে যদি আমাকে ধরে নিয়ে যায়,এইটা ভেবেই খুব ভয় পাচ্ছিলাম । দেহ কোষের হাইপোথ্যালামাস ব্রেইনকে বার বার পাকস্থলী শুন্যতার সিগন্যাল পাঠাচ্ছে । ভয় , খিদে ২টা একসাথে । মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রচণ্ড খিদে লাগার কারনে ভয়টা কম কাজ করতেছিল । মস্তিষ্কে ভয়ের সিগন্যালের চেয়ে খিদের সিগন্যাল বেশী প্রাধান্য পাচ্ছিল। রুমের ভিতরে অনেক গরম তাই বারান্দায় একটু সাহস করে আসি। বারান্দায় বসে বসে দেখছিলাম কিছুক্ষণ পর পর গাড়ি ভর্তি আর্মি আসছে আর এদিক ওদিক যাচ্ছে। আমি অন্ধকারে বসে শুধু তাকিয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর রুমে যাই ঘুমানোর জন্য। মোবাইলটা হাতে নিতেই অদ্ভুত একটা ব্যাপার ঘটল, দেখি ৫টা মিসকল । একটা সিটিসেল নাম্বার থেকে। তারপর আমি অনেকবার ট্রাই করি কিন্তু কোনভাবেই নেটওয়ার্ক পাইনি। সেই ভূতুরে কলের আর অনুসন্ধান পাইনি। অনেক কিছু চিন্তা করতে করতে একসময় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরি।
__________________________
মোবাইলে ১৫টা মিসকল উঠে আছে। তন্দ্রা মেয়েটার এই একটা স্বভাব , মোবাইল না ধরলেও সে কল করতেই থাকে।
-এতক্ষণ লাগে ফোন ধরতে ?
-একটা গল্প লিখছিলাম ।
-তোমার খালি এইসব আজাইরা গল্প লেখা। কেউ পড়ে তোমার গল্প?
-আমিতো কারো পড়ার জন্য গল্প লেখিনা । নিজের জন্য লেখি । আর কেই না পড়ুক একজনতো পড়বে।
-গল্প লেখা শেষ ?
-শেষ অংশটা বাকি । অবশ্য এইটা লিখব কিনা বুঝতেছিনা ।
-বাদ দাও লিখার দরকার নাই ।
-কালকে সাথে করে নিয়ে এসো।
এই তন্দ্রা মেয়েটা অদ্ভুত। ছোটবেলায় প্রত্যেক প্রবন্ধের নামকরনের সার্থকতা লিখতে হত। তন্দ্রার নামকরন সম্পূর্ণভাবে সার্থক। ওর সাথে কথা বললেই আমার ঘুম আসে ।মনে হয় বিশাল এক গাছের ছায়ার নিচে আরামদায়ক কোন বেঞ্চেতে শুয়ে আছি । বাতাসে গাছের পাতা নড়ছে আর পাশে সমুদ্রের গর্জন ।
:::…শঙ্খনীল পাখি…:::
আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতা।ঢাকা সিটি কলেজের বিদায়দিনে আমরা যে টি-শার্ট করেছিলাম সেটাতে এই কবিতাটি লেখা ছিল ।মজার ব্যাপার হল,আমি সব ফ্রেন্ডদের বলেছিলাম যে এইটা “হুমায়ন আহমেদ” এর লেখা ।সবাই খুব আগ্রহ নিয়েই কবিতাটি টি-শার্টে রাখার জন্য মত দিয়েছিল।সবাই জানে এই কবিতাটি “হুমায়ুন আহমেদ”-এর কবিতা। প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ আপনার এই মিথ্যা কবিতার জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন ।
এইতো সেদিন ঝলমলে ভোরের সূর্য
আকাশে স্বপ্নের রঙিন ঘুড়ি ওড়িয়ে
ডানা মেলে ধরেছিল ঐ আকাশপানে।
দিবসের শেষ সূর্য
পশ্চিম সাগর তীরে
আজ অস্তগামী ।
পূর্বের আকাশ মেঘলা
বিষণ্ণ মনে হৃদয় বর্ষণ
ঝরিতেছে আজ বিদায় বেলা।
নাহি যেতে দিব হায়
বারে বারে শঙ্খনীল পাখি
বিষণ্ণ আকাশে ডানা ঝাপটায় ।।
অবাক নির্বাক
…………………………………………………………………………………………..
সুইসাইড নোট
জোছনা জোয়ার
কি অবস্থা,দিনকাল কেমন চলছে, অনেকদিন পর দেখা,আজকে খুব গরম পড়ছে এইটাইপ কিছু বাক্য। এই টাইপ কথাগুলা তুই,তুমি,আপনি সবার সাথেই যায়।যদিও এইভাবে এদের সাথে বেশীক্ষণ কথা বলা যায়না।তখন আচ্ছা ঠিক আছে পরে কথা হবে এখন যাই একটু কাজ আছে , এইসব বলে কেটে পড়তে হয়।
একটা মেয়ে একটু দূর থেকে হেটে আসছে। মেয়েটির চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে মেয়েটা অসম্ভব রুপবতি। অসম্ভব রুপবতি মেয়েদের চেহারা জোছনার আলোয় অস্পষ্ট দেখায়। মেয়েটি আরেকটু কাছে আসতেই চেহারা স্পষ্ট হয়ে উঠল।খুব চেনা একটু মুখ।এখানে তার আসার কথানা । আমি খুব অবাক হয়েছি, আসলেই খুব অবাক হয়েছি। এইরকম অবাক জীবনে খুব বেশী হয়নি কিন্তু সেটা এই মুহূর্তে তার কাছে প্রকাশ করা যাবেনা।খুব কাছের মানুষকে অবাক করানোর মতো আনন্দ খুব কমই পাওয়া যায়। আমি তাকে এই মুহূর্তে সেই আনন্দ পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে চাই।তার প্রতি আমার অনেক অভিমান জমা আছে।
এলোমেলো ভাবনা
প্রত্যেক মানুষই আলাদা , প্রত্যেকটা মানুষের নিজস্ব কিছু ভাবনা,ভাললাগা আছে। এর মধ্যে হয়তো কারো সাথে কিছু বা অনেকটা মিলে যেতে পারে। ২টা মানুষ একসঙ্গে থাকতে হলে তাদের প্রত্যেকটা জিনিস মিল থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই,তাদের সব পছন্দ-অপছন্দ,ভাল লাগা খারাপ লাগে মিলতে হবে এমন নয়। কারো সাথে হয়তো গল্প করতে খুব ভাল লাগে, কারো সাথে খেলতে , কারো সাথে ঘুরতে , কারো সাথে কাজ করতে । একটা মানুষের সবকিছুই ভাল লাগবে এমনটি আশা করাও বোকামি। তবে হ্যাঁ, ঐ মানুষটার খারাপটা আমি মেনে নিতে পারবো কিনা সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে ৩টা জিনিস খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। একসেপ্টেন্স, আন্ডারস্ট্যান্ডিং , সেক্রিফাইস।
একসেপ্টেন্স- ২টা মানুষ একসাথে ভাল থাকার প্রথম ফ্যাক্টর হল একসেপ্টেন্স। কোন মানুষই পারফেক্ট হবেনা এইটা মেনে নেওয়া। যা আছে তার মধ্যেই নিজের সুখ খুঁজে নেওয়া। হয়তো কেউ একটু কম সুন্দর হবে ,কেউ একটু কম লম্বা হবে,কারো টাকাপয়সা কম থাকবে। এইরকম অনেক কিছু আছে যেগুলা ঐ মানুষটার কম থাকতে পারে আবার বেশী থাকতে পারে, পজেটিভ বা নেগেটিভ । হ্যাঁ, ঐ মানুষটাকে গ্রহণ করার আগেই এইসব বিবেচনা করতে হবে। সব কিছু আগে যাচাই বাছাই করা যাবে যে তাও না , আফটারঅল মানুষতো কোন পণ্য নয়। আমাদের একটা বড় সমস্যা হল আমারা আমাদের চাওয়া-পাওয়া অন্যদের সাথে কম্পেয়ার করি। এইটা আমাদের সুখকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। আরেকজনের এই জিনিসটা আমার থেকে ভাল এই একটা চিন্তাই যথেষ্ট নিজের সুখকে ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত করার জন্য।
“If we compare our happiness with others,happiness will walk away slowly”
আন্ডারস্ট্যান্ডিং– যেমন একজন মুভি দেখতে খুব পছন্দ করে আরেকজন কবিতা পড়তে। ২জনের পছন্দ ২দিকে।একজন কমেডি খুব পছন্দ করে আরেকজনের কমেডি ভাল লাগেনা।একজন কম কথা বলে আরেকজন বেশী। এইগুলা সমস্যা হবেনা তখনই যদি জিনিসগুলাকে মেনে নিতে শিখে , একজন আরেকজনকে বুঝতে শিখে।
সেক্রিফাইস- খুব গুরুত্বপূর্ণ যেটা থাকা বা না থাকার কারনে সম্পর্ক সুন্দরও অথবা নষ্ট হয়ে যায়। সম্পর্কের মধ্যে ইগো-এর অস্তিত্ব কোন ভাবেই রাখা যাবেনা ,না হলে কোন না কোন সময় সম্পর্কটা ঝাপসা হয়ে যাবে। সম্পর্কের একটা বড় প্রশ্ন “আমিই কেন সেক্রিফাইস করবো?!!”। সম্পর্কের মধ্যে এই প্রশ্নটাই ভয়ানক। কোন কোন সময় হেরে যাওয়া মানেই জিতে যাওয়া, না হয় একসময় মানুষটা জিতে যাবে হেরে যাবে সম্পর্কটা।
এই ৩টা ফ্যাক্টরকে কোনভাবেই ছাড় দেওয়া যাবেনা। ৩টার বেলেন্স রাখতে হবে।কোন একটা কম হলে আরেকটা খুব বেশী হতে হবে।
সম্পর্কের মধ্যে প্লেফুল সম্পর্কগুলাই ভাল। খুনসুটি,দুষ্টামি,মারামারি(অবশ্যই সিরিয়াস না :P) ,এতে করে সম্পর্ক বোরিং হয়না। সম্পর্ক বোরিং হয়ে গেলে খুব সমস্যা। বেশী ভালবাসাও ভাল না আবার ভালবাসা কম হলেও হবেনা।
একসাথে থাকতে গেলে ভুল বোঝাবুঝি,রাগারাগি,মান-অভিমান এইগুলা কম বেশী হবেই। কিন্তু একটা জিনিস কখনও ভাঙ্গা যাবেনা সেটা হল বিশ্বাস। এইটা এমন এক জিনিস যা একবার ভেঙ্গে গেলে পড়ে জোড়া লাগতে পারে কিন্তু সেটা অনেকটা ভাঙ্গা পা-এর মতো কাজ করবে। চলবে ঠিকই কিন্তু স্বাভাবিকের মতো নয়।
আরেকটা জিনিস হল, একটা মানুষকে চিনতে হলে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন। একসাথে না থাকা হলে চেনা অনেক কঠিন। কোনমানুষকে সম্পূর্ণভাবে সারাজীবনেও চেনা সম্ভব নয়।
কোন কিছু গ্রহণ করিবার আগে অনেকবার চিন্তা করিয়া লওয়া উচিত কিন্তু গ্রহণ করিবার পর চিন্তা করা কোনভাবেই উপযুক্ত নয়। এইটা মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম যে , কোন কিছু অর্জন করিবার পর সেটার আকর্ষণ পূর্বের ন্যায় বিরজমান থাকেনা কিন্তু সেই আকর্ষণ যদি স্থানচূত হয় বা প্রতিস্থাপিত হয় তাহা হয়লেই জীবনের ছন্দ পতন ঘটিবে, সম্পর্ক রসহীন হইয়া পরিবে। অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা সুকঠিন।
এই কথাগুলা একান্তই আমার মতামত এবং এইগুলা আমি আমাকেই বলতেছি।
তাবলীগের একটা জিনিস আমার খুব ভাল লাগে। তাবলীগে গেলে অন্যকে ভাল পথে,নামজের দাওাতের জন্য পাঠায়। দেখা যায় এমন অনেকেই যায় যারা আগে নিজেই খুব একটা নামাজ কালাম পড়তনা। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগত, ও নিজেই ঠিকনাই অন্যকে ঠিক হওয়ার জন্য কিভাবে পরামর্ষ দেয়। এইটা আমার মনেও প্রশ্ন ছিল । একদিন এর উত্তর আমি পেয়েছিলাম। উত্তরটা আমার খুব মনে ধরেছিল। কেউ যখন আরেকজনকে কোন কিছু করার জন্য বলে তখন তার মনে এইটা গেথে যায়, তার মনে বার বার এইটা খেলতে থাকে। যেমন কেউ যদি কোন কিছু পড়ার পর সেটা আরেকজনকে বোঝায় তখন সেই পড়া যে বোঝাল তার মনের মধ্যে খুব ভাল করে রয়ে যায় এবং কোন কিছু অপরিষ্কার থাকলে সেটা ক্লিয়ার হয়ে যায়।
আর এইসব কারনেই আমি উপরের কথাগুলা আমার নিজেকেই বলতেছি ।